সাইফুল ইসলাম:

কক্সবাজারের অধিকাংশ বেকারীতে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পণ্য তৈরি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকান থেকে শুরু করে নামিদামি বেকারিতে বিক্রি হচ্ছে বিস্কুট, চানাচুর, কেক, পাউরুটিসহ নানা ধরণের পণ্য। কেউ কি কখনও ভেবে দেখেছেন এই খাবারগুলো কোথায় এবং কিভাবে তৈরি হচ্ছে? এসব খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও যাচাই করার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা তাদের দায়িত্ব কতটা পালন করেছেন। নেই উৎপাদন ও উত্তীর্ণের মেয়াদ।

সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা বাংলাবাজারে জনতা ফুড প্রোডাক্টস, বাসটার্মিনালে নিউ ঢাকা ফুড প্রোডাক্টস, সদর উপজেলার খুরুস্কুলে কাওয়ার পাড়া বাজারে এশিয়া ফুড প্রোডক্টা ও নাইট ফুড প্রোডাক্ট ও পৌরসভার সমিতি পাড়ায় জেনারেল ফুড প্রোডাক্টস-সহ অধিকাংশ বেকারীগুলোতে ও নোংরা পরিবেশে নানান ধরনের খাবার তৈরি হচ্ছে। নোংরা পরিবেশে নি¤œমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে বেকারি সামগ্রী। কারখানার ভেতরে যেখানে তৈরি খাবার রাখা আছে সেখানেই আটা, ময়দার গোডাউন। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের তৈরি পণ্য। শ্রমিকরা খালি পায়ে এসব পণ্যের পাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে। আটা ময়দা প্রক্রিয়াজাত করানো কড়াইগুলোও রয়েছে অপরিস্কারও নোংরা। পণ্য তৈরির যন্ত্রপাতিতে দেখা গেছে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভনভন করছে। এসব বেকারীর পণ্যগুলো বিভিন্ন চায়ের দোকানে সরবরাহ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ বনরুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুট, বিভিন্ন ধরনের বেকারি সামগ্রী বাজারজাত করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঝে মধ্যেই এসব কারখানায় অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা দিয়ে থাকে। কিন্তু তাতেও এসব বেকারীতে তৈরীর পণ্যে উৎপাদন ও উত্তীর্ণের মেয়াদ থাকেনা। তাছাড়া এসব বেকারির মালিকেরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নোংরা ও অস্বাস্থকর পরিবেশে পণ্য তৈরী করে আসছে। ফজরের নামাজের পর পরই বিভিন্ন বেকারীর ভ্যানে বিভিন্ন এলাকার পাড়া মহল্লায়, অলিগলির জেনারেল স্টোর ও চায়ের দোকানে ওই সব পণ্য পৌঁছে দেন ডেলিভারিম্যানরা। বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে স্টিকার লাগানো থাকলেও উৎপাদন ও উত্তীর্ণের মেয়াদ লেখা নেয়। একদম খালি রয়েছে।

এদিকে শহরের বিভিন্ন চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, একাধিক পলি প্যাকেটে ঝুলছে পাইরুটি, বাটারবন, কেক, পেটিসসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য। এসব পণ্যের উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লিখা নেই। কত তারিখে উৎপাদন হয়েছে বা মেয়াদ কবে শেষ হবে তা বোঝা যায় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনতা ফুড প্রোডাক্টস এর কর্মচারী বলেন, দিনের বেলায় তারা কোনো পণ্য উৎপাদন করেন না। ফজরের আগেই পণ্য উৎপাদন শেষ হয়ে যায়। রাতে ভ্রাম্যমান আদালত, র‌্যাব ও পুলিশের ঝামেলা কম বলেই পণ্য উৎপাদন রাতেই শেষ করা হয়। তারপরেও কাজ যদি শেষ না হয় মাঝে দিনের মধ্যে তৈরী করে থাকে। শহরের চায়ের দোকানী মো. তারেক কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ, ফুটপাকেত চা-পান বিক্রি করে কোন রকম সংসার চালাই। উৎপাদনের তারিখ দেখার সময় কোথাই। সচেতন কাস্টমারের মাঝে মধ্যে উৎপাদ ও মেয়াদোত্তীর্ণ কথা জানতে চাইলে তখন বলি এগুলো দেখার সময় নেই। খুরুশস্কুল এশিয়ান ফুড প্রোডাক্টস বেকারির এর ম্যানেজার কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমাদের কারখানায় মালিকের হুকুম ছাড়া এ ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারবো না। আপনারা পারলে যা কিছু দেখছেন লিখেন গিয়ে। এ ব্যাপারে বাংলাবাজার জনতা ফুড প্রোডাক্টস এর স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান। তার বেকারির পণ্যে কোন ধরণের উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লাগে না। এসব পণ্যে তারিখ দেয়া না দেয়া তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার ফোন কেটে দেন।

এবিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. নোমার হোসেন বলেন, যেসব বেকারীতে নোংরা-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পণ্য তৈরি করেছে তাদের বিরুদ্ধে যেকোন সময়ে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় হবে।